ডায়াবেটিস কী, কেনো হয় ও ডায়াবেটিস হলে কী করণীয় জানুন আজই।

ডায়াবেটিস কী, কেনো হয় ও ডায়াবেটিস হলে কী করণীয় জানুন আজই।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী মেটাবলিক রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা বহুগুনে বাড়িয়ে দেয় তাই ডায়াবেটিস হলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: টাইপ 1 এবং টাইপ 2। ডায়াবেটিস হলে প্রথমেই একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট) কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডাক্তার রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে এবং রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ, লিপিড প্রোফাইল, কিডনি ফাংশন এবং অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফল দেখে ডায়াবেটিসের ধরন এবং তীব্রতা নির্ধারণ করবেন। এরপর তিনি রোগীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

ডায়াবেটিস এর দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:

  • টাইপ 1 ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যার অর্থ হল আপনার শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলক্রমে আপনার নিজস্ব কোষগুলিকে আক্রমণ করে। এই ক্ষেত্রে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলিকে আক্রমণ করে, যা ইনসুলিন তৈরি করে।
  • টাইপ 2 ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস সাধারণত ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবের কারণে হয়। টাইপ 2 ডায়াবেটিসে, আপনার শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে এটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিসের অন্যান্য ধরনগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয়। এটি সাধারণত প্রসবের পরে অদৃশ্য হয়ে যায়।
  • জেনেটিক ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস জেনেটিক কারণে হয়। এটি সাধারণত শৈশব বা কৈশোরে শুরু হয়।
  • ইনসুলিন প্রতিরোধী ডায়াবেটিস: এই ধরণের ডায়াবেটিস সাধারণত টাইপ 2 ডায়াবেটিসের সাথে ঘটে। এটিতে, আপনার শরীর ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল নয়, তাই এটি শর্করা ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিসের কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে, টাইপ 1 ডায়াবেটিসের জন্য, গবেষকরা মনে করেন যে জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলি একটি ভূমিকা পালন করে। টাইপ 2 ডায়াবেটিসের জন্য, গবেষকরা মনে করেন যে ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং বয়স হল প্রধান ঝুঁকির কারণ।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ঘন ঘন প্রস্রাব
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা
  • ওজন হ্রাস
  • ক্লান্তি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • ত্বকের ক্ষত

ডায়াবেটিস হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার থাকা উচিত। এছাড়াও, অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, এবং ফাস্ট ফুড পরিহার করা উচিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন বেশি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  • ধূমপান বর্জন: ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান বর্জন করা উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা, রক্তচাপ, এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়াও, চোখ, কিডনি, স্নায়ু, এবং পায়ের পরীক্ষা করা উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলিও কার্যকর হতে পারে:
  • রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন।
  • আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত দেখা করুন।
  • ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলি সম্পর্কে জানুন এবং সেগুলি প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নিন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারেন তবে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • চোখের সমস্যা, যেমন রেটিনোপ্যাথি, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
  • কিডনির সমস্যা, যেমন নেফ্রোপ্যাথি, যা কিডনির ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
  • স্ট্রোক।
  • পায়ে জটিলতা, যেমন নিউরোপ্যাথি এবং আলসার, যা পা হারানোর কারণ হতে পারে।

 

ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ইনসুলিনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসার লক্ষ্য হল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। টাইপ 1 ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। টাইপ 2 ডায়াবেটিসের রোগীদের ওষুধ, ইনসুলিন বা উভয়ই প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধূমপান এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব 

ডায়াবেটিস সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন "বহুমূত্র রোগ"
কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানতে পড়ুন "কোলেস্টেরল কী" 

More news and event